November 1, 2024, 10:22 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ লাইনে জব্দ করে রাখা ২শতাধিক রিক্সা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। কঠোর লক্ডাউন অমান্য করে রাস্তায় নামায় প্রথম দুই দিনে এসব রিক্সা ধরে ভেতরে নিয়েছিল পুলিশ। এসব রিক্সার চালকরা এই তিনদিনই অপেক্ষা করছিলেন থানা ও পুলিশ লাইনসের সামনে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শওকত কবির বলেন, থানায় ছিলো ৪০টির মতো রিক্সা ও অটোরিক্সা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মুচলেকা নিয়ে রিক্সা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান। এরপরই শুক্রবার সকাল থেকেই রিক্সা ছেড়ে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে রিক্সাচালকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ নাম তালিকাভূক্ত করা হয়। তারপর তাদের মুচলেকায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সেই কপি জমা দিয়ে একে একে রিক্সা নিয়ে যান চালকরা।
একই সময়ে পুলিশ লাইনস কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেয়া হয় অন্তত: ১০০টি রিক্সা ও অটোরিক্সা। পুলিশ লাইনসের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে আরো অর্ধশতাধিক অটোরিক্সা রয়েছে। এগুলো জুম্মার নামাজের পর ছেড়ে দেয়া হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
লকডাউনের প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে রিক্সা-অটোরিক্সা আটক শুরু করে পুলিশ। এরপর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায় ২শ রিক্সা আটক করে পুলিশ। এসব রিক্সা কুষ্টিয়া মডেল থানার চত্বর এবং পুলিশ লাইনসে বাস্কেট বল গ্রাউন্ডে রাখা হয়। এরপর থেকেই রিক্সাচালকরা তাদের জীবিকার অবলম্বন রিক্সা ফেরত পাওয়ার আশায় থানা এবং পুলিশ লাইনের আশপাশে অপেক্ষা করতে থাকেন।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিন ১৫ এপ্রিলও রিক্সা-অটোরিক্সা আটক করা হয়। এদিন দুপুর ১২টার দিকে ৩০-৪০ জন রিক্সাচালক থানার প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভ দেখান।
এসময় ওসি শওকত কবির এসে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি আশ্বাস দেন উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে দ্রুত রিক্সাগুলো ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেবেন। এ প্রেক্ষিতে রিক্সাচালকদের সামনেই ওসি শওকত কবির পুলিশ সুপারের অফিসের দিকে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসেম তিনি সন্ধ্যার পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে সবাইকে জানান।
কিন্তু ওইদিনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রিক্সা ছাড়া হয়নি। ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত থানা মোড়ে বক চত্বরে অবস্থান করে ছিলেন রিকশাচালকরা। সেসময় রিক্সাচালক হাবিল চিৎকার করে বলেন, আমাদের দেখার কেউ নেই। পেটের দায়েই তো রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। আমাদের সাত দিনের খাবার দিয়ে দিলেই তো বাড়ি থেকে বের হতাম না।
অটোরিক্সাচালক ইছাহক আলী বলেন, চার চাকার কার গাড়ীতো ঠিকই চলছে। তাদেরতো ধরে থানায় নেয়া হচ্ছে না। যতো অত্যাচার গরীব মানুষের প্রতি। কেউ তো দুই কেজি চাল নিয়েও আসে না।
একজন রিক্সাচালক দোষ চাপান সাংবাদিকদের ওপর। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা ছবি তুলতে আসলো আর তাদের দেখানোর জন্য রিক্সা ধরে গেটের ভেতরে ভরতে শুরু করলো। তিনি অভিযোগ করেন, কয়েকটি রিক্সা ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তাহলে আমরা কী দোষ করলাম।
শুক্রবার দুপুরে রিক্সা পেয়ে দ্রুত চলে যান এর চালকরা। এসময় থানাপাড়ার মো. সোহেল বলেন, কিছুই বলার নেই। সামান্য কারণে তিনদিন ভূগতে হলো। তিনি বলেন, রিক্সা না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তারা যাবেন কিসে? শহরে তো রিক্সা চলছে। তাহলে আমাদের কেন আটকে হয়রান করা হলো? প্রশ্ন করেন তিনি।
তৃতীয় দিনেও কুষ্টিয়া কঠোর লকডাউন চলছে কুষ্টিয়ায়। জরুরি সেবার আওতার বাইরে কোন দোকান-পাট খোলেনি। মহাসড়কে এবং শহরের সড়কে যানবাহনের উপস্থিতি একেবারেই কম। ব্যাক্তিগত দু-একটি প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেল ও রিক্সা চলতে দেখা গেছে।
Leave a Reply